শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৬ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১

স্বাস্থ্যবিধি না মানায় বাড়ছে সংক্রমণ

amarsurma.com

আমার সুরমা ডটকম:

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের এক বছর ছিল গত বছরের ৮ মার্চ। ওই দিন দেশে শনাক্ত হয়েছিল ৩ জন রোগী। নানা চড়াই উৎরাইয়ের এক বছরে সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় আবারও বাড়ছে সংক্রমণ। বিশেষ করে গত বুধবার এবং গতকাল টানা দুই দিন শনাক্ত হাজার পেরিয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের নয় মাস পর গত নভেম্বর থেকে সংক্রমণের নিম্নগতি যে স্বস্তি দিচ্ছিল সবার মনে, তাতে অস্বস্তি ধরিয়েছে সা¤প্রতিক প্রবণতা।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সংক্রমণের গতি আবার ঊর্ধ্বমুখী। গত কয়েক মাসে দৈনিক শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলেও এ মাসের শুরু থেকে আবার তা বাড়ছে। দুই মাস পর গত বুধবার এক দিনে হাজারের বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা আবার বাড়তে শুরু করেছে। আর গতকাল তা আরও বেড়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা করোনার গ্রাফ ঊর্ধমুখি হওয়ায় চিন্তিত। তারা বলছেন, জনগণ স্বাস্থ্যবিধি একদম মানছেন না। একইসঙ্গে প্রশাসনের তরফেও সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রিসভার বৈঠকেও গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনটি নির্দেশনা দিয়েছেন। বলেছেন, হেলাফেলা করা যাবে না। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। জনসমাবেশে নির্ধারিত সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। টিকা নিন বা না নিন সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, যেভাবে সামাজিক অনুষ্ঠান হচ্ছে, মাস্ক পরার বালাই নেই, সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই, সংক্রমণ তো বাড়বেই। পাশাপাশি মানুষ যেভাবে কক্সবাজার, সিলেটে যাচ্ছে, যেভাবে সামাজিক অনুষ্ঠান হচ্ছে তাতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। জাহিদ মালেক বলেন, সারা দেশে করোনা মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি আছে। তবে অনুষ্ঠানসহ সামাজিক কার্যক্রম সীমিত পরিসরে করার আহবান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলছেন, নিয়ম মেনে চললে বর্তমান করোনা পরিস্থিতির তুলনায় আরও ভালো অবস্থানে থাকতে পারতো বাংলাদেশ।

আবার কেন সংক্রমণ বাড়ছে- এর উত্তরে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নেয়া পদক্ষেপ বাস্তবায়নে শৈথিল্য, মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা, টিকাদান শুরুর পর মানুষের অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাস, পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়া, নির্বাচন করাসহ জনসমাগম হয় এমন অনুষ্ঠান আয়োজনই এর কারণ।

স্বাস্থ্য অধিদফতর গতকাল একদিনে ১ হাজার ৫১ জন রোগী শনাক্তের তথ্য জানিয়েছে। যা আগের দিন ছিল ১০১৮ জনে। গত ১০ জানুয়ারির পর একদিনে সর্বাধিক শনাক্ত।

সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর হারও আবার ৫ শতাংশের উপরে উঠে এসেছে। দৈনিক শনাক্তের হার সর্বশেষ ৫ এর বেশি ছিল গত ১৮ জানুয়ারি। এরপর কমতে কমতে তা ৩ শতাংশের নিচেও নেমেছিল। মার্চের শুরু থেকে তা আবার ধীরে ধীরে বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দৈনিক হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩শর ঘরে। পরদিন তা ১৪শ ছাড়ায়। ৬ মার্চ ১৫শ’ ছাড়িয়েছে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা। ৮ ও ৯ মার্চ দৈনিক ভর্তি রোগী ছিল যথাক্রমে ১৬১৭ জন এবং ১৬৫১ জন। আর গতকাল ছিল ১৭৬৯ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা ডা. বে-নজির আহমেদ নতুন করে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যবিধি না মানাকেই দায়ী করেন। তিনি বলেন, সংক্রমণ কমার ফলে মানুষের মধ্যে এই ধারণা আসতে পারে যে সংক্রমণ আর হবে না। পর্যটন থেকে শুরু করে বিয়েশাদী বেড়েছে, অনেকগুলো ভোট হল, যেখানে বহু মানুষের সমাগম হয়েছে, যারা নিয়ম-কানুন মানেনি।

মুগদা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, টিকা আসার পর মানুষের মধ্যে ‘ভুল ধারণা’ তৈরি হয়েছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকাদান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪২ লাখের বেশি মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেয়াও হয়েছে।

প্রফেসর আহমেদুল কবীর বলেন, টিকা আসার আগে মানুষের মধ্যে যে ভয় ছিল, সংক্রমণ কমেই গিয়েছিল। টিকা আসার পর আমরা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে আরেকটা বিপদ ডাকছি। যখনই আমাদের দেশের এয়ারপোর্টে টিকা এসেছে, তখনই আমরা মনে করেছি যে আমাদের প্রতিরোধ তৈরি হয়ে গেছে। কিন্তু টিকা প্রথম ডোজ দেয়ার পরও অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লাগবে ইমিউনিটি তৈরি হতে।

মহামারী প্রতিরোধে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে যাওয়া আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টিন করা, রোগীদের আইসোলেশন করার ক্ষেত্রে শিথিলতা আছে। এর সঙ্গে বদ্ধ জায়গায় অনেক লোকের সমাগমও সংক্রমণ বাড়ার কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের করোনাভাইরাসের যে নতুন ধরন বাংলাদেশে এসেছে, তার প্রভাবও পড়তে পারে। তবে সেজন্য গবেষণার প্রয়োজন।

ডা. বে-নজীরও একই মত জানিয়ে বলেন, ইউকে (যুক্তরাজ্য) থেকে বহু লোক আমাদের দেশে আসছে। তারা অনেকে কোয়ারেন্টিনে যায়নি, কেউ দুই দিনের, সাতদিনের কোয়ারেন্টিন করেছে। যুক্তরাজ্য থেকে আসা ছয়জনের শরীরে করোনাভাইরাসের নতুন সেই রূপের সংক্রমণ পাওয়া গেলেও তা এখনও দেশে ছড়ায়নি বলে দাবি করেছে আইইডিসিআর।

আইএডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলেছেন, কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করে দেখেছি, তাদের সংস্পর্শে এসে কেউ আক্রান্ত হননি। আবার বাংলাদেশে গ্রীষ্মের আবহাওয়ার সঙ্গে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার একটি সম্পর্ক থাকতে পারে বলে মনে করছেন ডা. বে-নজির; যদিও এ বিষয়ে কোনো প্রামাণ্য তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তার মতে, গত বছর মে-জুন এই মাসগুলোয় সংক্রমণ বেশি ছড়িয়েছে। এমন হতে পারে গ্রীষ্মপ্রধান দেশে এই ভাইরাসের প্রবণতা হয়ত গ্রীষ্মকালে বাড়ার। কেননা ভারতেও আমাদের মতো সংক্রমণ বাড়ছে। তবে আরও দুই মাস পর ভালোভাবে বোঝা যাবে, এই ভাইরাসের গ্রীষ্মকালে বাড়ার প্রবণতা আছে কি না।

কারণ যাই হোক না কেন, সংক্রমণ যে আবার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে, সেটাই আশঙ্কার বলে মনে করেন ডা. মুশতাক। এই বৃদ্ধি ধারাবাহিক। একদিন বাড়ছে, একদিন কমছে, বিষয়টা এমন নয়। সংক্রমণ বাড়ার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সামনে বিপদের দিন আসছে বললে ভুল হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তুলনামূলক ভালো পরিস্থিতি দেখে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তার ঠিক আগে অবনতিশীল এই পরিস্থিতিতে দৈহিক দূরত্ব রক্ষা, মাস্ক পরা, হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধি পালনের উপর জোর দিচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রফেসর আহমেদুল কবীর সভা-সমাবেশ-মিছিলসহ জনসমাগমের মতো কর্মসূচি বন্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। আবার সব কিছু বন্ধ দেয়ার পক্ষপাতী নন ডা. মুশতাক। তিনি বলেন, সংক্রমণ ঠেকাতে হলে শীতের সময় স্বাস্থ্যবিধি যেমন কঠোরভাবে মানা হয়েছিল, তেমন কঠোর হতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com